ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কি টিকবে?

ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি হামলা দৃশ্যত যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের ‘অবিলম্বে অস্ত্র বিরতিতে’ সম্মত হওয়ার খবর দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরই দুই দেশ পাল্টাপাল্টি অস্ত্রবিরতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ফলে এই সমঝোতা কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা প্রথম ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই সফলতার কৃতিত্ব দাবি করলেও এই সমঝোতার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার মাত্রা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বক্তব্যের ভিন্নতা রয়েছে।
কীভাবে সমঝোতা হলো?
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশাল পোস্টে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর, আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান একটি ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
এর কিছু পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তান কেবল অস্ত্রবিরতিতেই সম্মত হয়নি, সেই সঙ্গে ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা শুরু করতেও’ সম্মত হয়েছে।
রুবিও আরও বলেন, গত দুই দিন ধরে তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর এই অস্ত্রবিরতি সম্ভব হয়েছে। এর পর পাকিস্তান ও ভারতের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সমঝোতাটি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সম্পাদিত হয়েছে বলে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে আরো আলোচনা করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও ভারত জানায়।
যদিও ভিন্ন বক্তব্য পাকিস্তানের। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘এই অঞ্চলের শান্তির জন্য নেতৃত্বদান ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
আলোচনায় সম্পৃক্ত এক পাকিস্তানি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে মার্কো রুবিও এই চুক্তি সম্পাদনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনায় অনিশ্চয়তা ছিল।
যুদ্ধবিরতি টিকবে?
সিএনএন বলছে, যদিও ভারত ও পাকিস্তান আপাতত সংঘাত থেকে সরে এসেছে, তবে যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে কি না-তা এখন দেখার বিষয়।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি শনিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি সমঝোতা বারবার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। এর আগে ভারত ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর উভয় অংশে বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়।
পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, তবে জোর দিয়ে বলে তারা ‘অস্ত্রবিরতির শর্তের বিশ্বস্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে ভিসা স্থগিত ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো ব্যবস্থা নেয়। ভারত ১৯৬০ সালে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার কথা জানায়।
পাকিস্তানের পানি মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সিন্ধু পানি চুক্তি (যুদ্ধবিরতি) আলোচনার কোনো অংশ না। ভারত সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তাও রয়টার্সকে জানান, এই চুক্তির বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে সামনের দিনগুলোতে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হওয়া নিয়ে দুই দেশ কী পদক্ষেপ নেয় তা জানতে আরও অপক্ষো করতে হবে।